উএস-বাংলা বিমান বিধ্বস্তের কথা এখন আমাদের কারো কাছেই অজনা নয়। গত ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করার আগেই ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়। আবার একই দিনে মিরপুর ১২ নম্বর ইলিয়াস মোল্লা বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনায় হাজারো ঘরবাড়ি পুড়ে যাবার সংবাদ শুনতে পেলাম। আসলে আমার আলোচনার মূল বিষয় এ দুটির কোনটিই না।
ফেসবুকসহ সকল গণমাধ্যমে বিমান বিধ্বস্তের সংবাদটা খুব ভালো আকারে ট্রিটমেন্ট পেয়েছে, আমরা দেখেছি। এখন আসি আমাদের নিজস্ব গণমাধ্যমে। হয়ত সবাই লেখালেখি করি না, এমনকি কমেন্টও না। কিন্তু সবাই কম বেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ফলোও করার চেষ্টা করি। আমরা বাংলাদেশের সবথেকে বেশি পরিচিত সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দিনে একবার হলেও ঢুঁ মারার চেষ্টা করি। আমি ঐদিন লক্ষ্য করলাম অধিকাংশ লোক শুধুমাত্র নেপালের ইউএস-বাংলা বিমান বিধ্বস্তের ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্ট্যাটাস দিচ্ছে। তাদের মধ্যে আমি নিজেও একজন। দেখে দেখে যাতে উঠার চেষ্টা নয়, মন থেকেই দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার মনে হয় এর মধ্যে থেকে সিকিভাগ লোকও মিরপুরের সেই বস্তির আগুন নিয়ে লেখেননি। কেন জানেন?
আমরা আসলে আগুনের মৃত্যু দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। প্রায়ই দেখা যায় এমন কোন মৃত্যু আমাদের হৃদয়কে মনে হয় আগের মত এত স্পর্শ করতে পারে না। অন্যদিকে এমন একটা আনকমন ঘটনা যেখানে একসাথে বিদেশের মাটিতে এত দেশি প্রাণের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ এবারই প্রথম। আর মোল্লা বস্তিতে হাজারো মানুষের কান্না আমাদের হৃদয়ে প্রায় স্থানই পাচ্ছে না বলে আমার ধারণা। আবার এতেই শেষ নয়; ক্ষতিপূরণের দিক থেকেও আছে বিশাল বৈষম্য।
মোল্লা বস্তির আগুনের কাহিনীর মত অনেক কিছুই আমরা ভাইরাল করি না অথবা করতে চাই না। এমন অনেক ঘটনা মানুষের কান পর্যন্ত পৌঁছে না বলেই ক্ষতিপূরণের বিশাল বৈষম্য থেকেই যায়। আর সবচেয়ে বড় কথা তারপর বাংলাদেশের খেলা, অমক, তমক আমাদের অন্যদিকে টেনে নিয়ে গিয়েছে। আর আমাদেরও সয়ে গেছে। যার গেছে সেই একমাত্র বুঝতেছে।
তবে এই সয়ে যাওয়াটা খুব ভালো জিনিস বলে আমার মনে হয় না। আজ এক বয়স্ক ভিক্ষুক কেঁদে কেঁদে আমার কাছে এসে দুই টাকা চাইলো কিন্তু আমি দিলাম না। অথচ আমার দেয়ার মতো সামর্থ্য ছিলো। না দেয়ার কারণটা নিজেই পরে ভাবলাম। তখন মনে পড়লো, আমি তো বেশ কিছুদিন ফকিরদের সিন্ডিকেটের অনেক অনুসন্ধানমূলক ভিডিও দেখেছি আর তারপর থেকে তাদের প্রতি আমার ঘৃণা জন্মেছে। এখন আমার সামনে কেঁদে মরে গেলেও টাকা দিতে ইচ্ছে করবে না। কিন্তু আসলে কি কোন লোক দরিদ্র হতে পারে না? কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ভিক্ষুকের কান্নাও এখন আমাদের মাঝে সয়ে যাচ্ছে, তাই টাকা দিতে ইচ্ছা জাগে কম।
আপনি ঢাকা শহরের রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন? মনে হবে অন্য কেউ তার দোকানের সামনে দিয়ে দয়া করে আপনাকে হাঁটাচলা করার জন্য রাস্তা দিয়েছে। ফুটপাত দখলসহ গাড়ি পার্কিং এর অব্যবস্থা কিন্তু আমাদের আসলে সয়ে গেছে।
আবার রাস্তায় চলতে গেলে ছিনতাইয়ের কবলে পড়লেন কিংবা পকেট কেটে কিছু নিয়ে গেলো? কাওকে বলতেও পারবেন না। বললে উত্তর হিসেবে হয়ত পেতে পারেন, “আপনি নতুন নাকি? এখন তো আগের থেকে কম হয়।”
বললে আরও অনেক বিষয় নিয়ে বলা যায়। যারা পড়ছেন তারা হয়ত আরো নতুন কোন বিষয় নিয়ে ভাবছেন। হ্যাঁ, আমার মাথায়ও আসছে কিন্তু অনেক কিছু লেখা যায় না। তাছাড়া আমার মত মূর্খ লোক এ টুকুই ভাবতে পারে বলে আমাকে ক্ষমা করবেন।
 
Comments
Post a Comment